• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪



মালয়েশিয়ার প্রবাসীর মৃত্যু,দ্রুত সন্তানের লাশ চান মা

গ্রামীণ কণ্ঠ

গাজীপুর প্রতিনিধি :মালয়েশিয়ায় বাসা থেকে বাইসাইকেলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে মালয়েশিয়ার ইপোহ রাজ্যের পেরাক শহরে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বাইসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান আরমান।নিহত প্রবাসী শ্রমিক আরমান আলী শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের কপাটিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রাশেদের ছেলে। তার মৃত্যুর খবরে শোকের মাতম চলছে নিহতের বাড়িতে।স্বজনদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেন প্রিয়জনের লাশ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ২০০৫ সালে মালয়েশিয়ার ইপোহ রাজ্যের পেরাক শহরে পাড়ি জমিয়েছিলেন আরমান । তিনি মালয়েশিয়ার ইপোহ রাজ্যের একটি কেমিক্যাল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
গত সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে মালয়েশিয়ার ইপোহ রাজ্যের পেরাক শহরের নিজ বাসা থেকে বাইসাইকেলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বাইসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই আরমান মারা যান।

এদিকে দুর্ঘটনায় আরমানের মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে শুরু হয় শোকের মাতম। নিহতের মায়ের গগন বিদারি কান্নায় ভারি হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ।

নিহতের বৃদ্ধা মা মানিক জান বলেন, জীবনের বড় একটা অংশ বিদেশে কাটিয়েছে আমার বাজান। একেবারে দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা ছিল তার। তবে আর জীবিত আসবে না সে। এই বলে হাউমাউও করে কেঁদে উঠেন মানিক জান। ছেলের শোকে একটু পর পর কাঁদছেন আর মোবাইল ফোনে ছেলের ছবি দেখে বার বার চুমু খাচ্ছেন। বাড়িতে যত লোকজন আসছেন, সবার কাছে জানতে চাচ্ছেন কখন তাঁর ছেলে আসবে।

নিহতের স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এক সন্তানকে নিয়ে তিনি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন।একমাত্র ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। স্বামী মারা গেছে এখন ছেলের লেখাপড়ার খরচ কি দিবে? ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো এসব কথা বলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সালমা আক্তার।

তিনি তার স্বামীর মরদেহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।তিনি আরও বলেন ২০ বছর ধরে আমার স্বামী মালয়েশিয়া থাকেন। সোমবার সকাল ৮টার দিকে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর কাজে যাবেন বলে ফোন কেটে দেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে স্বামীর মোবাইল ফোনে কল দিলেও কোনো খবর পাচ্ছি না। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর বন্ধু ফোন করে জানান, আমার স্বামী মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্বামীর বন্ধু আরও জানান, বাসা থেকে বাইসাইকেলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মালয়েশিয়ার পেরাক শহরে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় তিনি মারা যান।

তিনি আরও বলেন, ছয় বছর আগে সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন তাঁর স্বামী। সামনের রমজান মাসে দেশে আসার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। ১৩ বছরের ছেলে সাঈমকে নিয়ে এখন তাঁর সংসার। স্বামীর লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

নিহতের বড় ভাই আব্দুর রহিম বলেন, ‘ভাইয়ের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। হঠাৎ মৃত্যুর খবর শোনার পর সবকিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেল। বহু বছর ভাইকে দেখি না। আসছে রমজানে দেশে আসবে বলে জানিয়েছিল। আর আসা হলো ভাইয়ের। কথা হলো না ভাইয়ের সঙ্গে। এখন ভাইয়ের লাশের অপেক্ষায়।

নিহতের শ্বশুর আবুল হাসেম বলেন,প্রায় ২২ বছর আগে আরমানের সাথে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়।তাঁদের সংসারের একটা মাত্র পুত্র সন্তান রয়েছে।মঙ্গলবার মেয়ের জামাতার মৃত্যুর খবর শোনে নাতিকে মায়ের জামাই বাড়িতে আসি।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মতিউর রহমান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক আরমান আলী আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মালয়েশিয়া থেকে মৃত্যু নিশ্চিত খবরটি জানানোর পর পরিবারের সদস্যরা আমাকে অবহিত করেছেন। মরদেহ দেশে আনতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন