• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট, ২০২৪
আপডেট : ২৭ আগস্ট, ২০২৪



শুকনো খাবারে কি আর বাচ্চাদের বাঁচানো যায়

গ্রামীণ কণ্ঠ

সারোয়ার মিরণ প্রতিনিধি  :  টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বন্যাদুর্গতের আশ্রয় দিতে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ৪৯টি স্থায়ী এবং বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করে হলেও এখন সেটা ৬১ তে উন্নীত করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২৭ আগষ্ট) উপজেলার বন্যা কবলিত চরপোড়াগাছা, চর বাদাম, চর কলাকোপা, চর সীতা, হাজীগঞ্জ, কোডেক বাজার, হারুন বাজার এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিত মানুষের ভীড়। দিনের বেলায় পুরুষদের উপস্থিতি কম থাকলেও রাতে তারা কেন্দ্রে ফেরায় এ সংখ্যা এক থেকে দেড়গুন বেড়ে যায়।
উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে চর পশ্চিম চর কলাকোপা হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়- নির্মানাধীন ৩ তলা ভবনের উপরের দুইটি ফ্লোরে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছেন ১শ পরিবারের ৪শতাধিক মানুষ। নিচ তলা খোলা থাকায় সেখানে শতাধিক গরু-ছাগল রাখা আছে।
স্থানীয়ভাবে আশ্রয়কেন্দ্রটি দেখভাল করা আশরাফ উদ্দিন ও ফখরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহায়তা কিংবা জনপ্রিতিনিধিদের কেউ এখানে আসেনি। আমরা এলাকার কতিপয় যুবকরা বিভিন্নজন থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকদের গত ৩দিন ধরে খাবারের ব্যবস্থা করছি। গত তিন দিন ধরে এ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া শারমিন আক্তার জানান, বেড়ীর উত্তর-পশ্চিম পাশ থেকে বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পরিবারের সবাই মিলে এখানে আসছি। বাড়ি-ঘর সব পানির নিচে। একেবারে অসহায় হয়ে আছি নানান কষ্টে। খাওয়া দাওয়া কীভাবে চলে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এলাকার মানুষজন খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এসব শুকনো খাবারে কি আর বাচ্চাদের জীবন বাঁচানো যায় নিজেরাতো খেয়ে- না খেয়ে বেঁচে আছি।
চর চরসীতা গ্রামের লম্বাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে আরো করুন চিত্র। প্রধান সড়ক থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দু’শ মিটার পথ কোমরসম পানিতে ডুবে আছে।
আশ্রিতরা যাতায়াত করছেন কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা কয়েকটি ভেলা দিয়ে। কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০টি পরিবারের ২শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ সামগ্রী পৌছালেও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে যাতায়াতের পথটি পানিতে ডোবা থাকায়।
এছাড়াও পশ্চিম চর পোড়াগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর পোড়াগাছা সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রেই মানুষের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এসব মানুষের জন্য ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দেখভাল করা স্থানীয়রা।
অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকা যতই বাড়ছে ততই ত্রাণের জন্য মানুষের হাহাকার বাড়ছে। বন্যা কবলিত চরসীতা ও চর কলাকোপা সীমান্ত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে-  সেতুের দুপাশ উঁচু হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ সামগ্রী বিতরন করছেন। ত্রাণ সামগ্রী ভর্তি সারি সারি ট্রাক পিকআপ, ট্রাক্টর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখান থেকে নৌকা ও ভেলায় করে বিভিন্ন এলাকায় পৌছে দিচ্ছেন তারা। এসব গাড়ির আশপাশ ঘিরে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন ত্রাণ পাওয়ার আশায়।
অপেক্ষমান কয়েকজনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, গাড়িওয়ালারা রাস্তার পাশের মানুষ বলে আমাদেরকে কিছুই দেয়না, সব নৌকায় করে নিয়ে যায়। পাশাপাশি কথা হয় নরসিংদী থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা দেলাপাড়া ছাত্র ও যুব উন্নয়ন ফোরামের সদস্য আবু সায়েম এর সাথে।
তিনি জানান, প্রায় ১ হাজার জনের জন্য ত্রাণের প্যাকেজ নিয়ে আমরা কয়েকজন আসছি। কিন্তু এখানে এসে এটাকে নিতান্তই অপ্রতুল মনে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে আমরা আসলে খুশি করতে পারছিনা। তাই খারাপ লাগছে।  রাস্তায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করা শাহেদা বেগম, আছিয়া বেগম, নুরুন্নাহারসহ বেশ কয়েকজন জানান, মানুষ গাড়ি নিয়ে আসে-যায়। রাস্তার পাশের মানুষরা বেশি বেশে ত্রাণ পায় বলে আমাদেরকে কেউই দেয় না।
উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণকারী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার জন্য জেলা প্রশাসক একটি কমিটি করতে নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুয়ায়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম এবং উপজেলা তথ্য সেন্টারের উদ্যোক্তা তানিম হোসেনকে নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় ইতিমধ্যেই ত্রাণ সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। এতে করে ত্রাণের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন