প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলার এক বছর পার হলেও এখনো আদালতে চার্জশিট জমা দেয়নি পুলিশ। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদী এখনো গ্রেফতার হয়নি সেই কোথায় আছে তাও জানতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোও উদ্ধার হয়নি।এ দিকে মামলার চার্জশিট না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদীসহ নিহতের স্বজনেরা। চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে দাবি করেছেন মামলার বাদী ও সাক্ষীরা।
মামলার বিবরণী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার পোদ্দার বাজার থেকে নাগের হাটে যাচ্ছিলেন নোমান ও রাকিব । পশ্চিম বাজার এলাকার ব্রিজের পাশে পৌঁছালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁদের গতিরোধ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নোমান ঘটনাস্থলে মারা যান। হাসপাতালে মারা যান রাকিব ।
ঘটনার পরের দিন বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক দেওয়ান ফয়সাল, বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মশিউর রহমান নিশান, আওয়ামী লীগ কর্মী রুবেল দেওয়ান, শুটার রাকিবসহ ২৩ জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে গ্রেফতারকৃত অনেক আসামী ধরাপড়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে। তবে গ্রেপ্তার কয়েক আসামি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবদুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত দুই বছরে এই এলাকায় দলীয় কোন্দলের জেরে নিহত হয় আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মী। গত ১৫ বছরে আরও একটি জোড়া খুনসহ ১২ নেতা-কর্মী নিহত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ হয়েছে দলীয় কোন্দল, ভাগ-বাটোয়ারা, আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে।
নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার এক বছর পার হয়েছে। এখনও প্রধান আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আবুল কাশেম জিহাদী বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। জিহাদী ও তাঁর বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছে না স্থানীয়রা। এখনও খুব ভয়ে আছি। কখন আবার কোন মায়ের বুক খালি হয়, সে আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। দ্রুত এই সন্ত্রাসীকে যেন গ্রেপ্তার করা হয় সেটাই এখন আশা।
নিহত আবদুল্লাহ আল নোমানের ভাই ও মামলার বাদী বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার এক বছর পার হয়েছে। এখনও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, সবাই এখন জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যেই চলাফেরা করছে। মামলা তুলে নিতে নানা ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। অথচ এখনও প্রধান আসামি জিহাদীকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ। সে গ্রেপ্তার না হওয়ায় পরিবার নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।
লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, এটা সবার প্রত্যাশা। তবে এই আলোচিত মামলাকে কেউ হাতিয়ার বানিয়ে সাধারণ মানুষকে যেন হয়রানি না করে সেদিকে প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবি সিদ্দিক বলেন, আলোচিত মামলা হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় লাগছে। তদন্ত করতে গিয়ে কোনো নির্দোষ ব্যাক্তি যেন অপরাধী না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে তদন্ত কাজ অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যে মামলার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে।’
মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যার রহস্য ও কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত, সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :