প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালের জুন মাস শুরু করে ১৮ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও সেই কাজটি এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। আর এই কাজে সহযোগীতা গণপূর্ত বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের।
জানা গেছে, জেলাবাসীকে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৪ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। রুপালি জিএম অ্যান্ড সন্স কনস্যুডিয়াম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। প্রথম পর্যায়ে কাজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা। ২০১৮ সালের ১২ জুন কাজটি শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। শুরুতে কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
প্রথম দফায় শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন পর্যন্ত নতুন সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে আরও তিন বছর পার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে দেড় বছর মেয়াদি কাজ গিয়ে গড়ায় ৬ বছরে। কিন্তু আজও শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের কোন প্রদক্ষেপ নেই। শুরুতে নির্মাণ কাজে অনিয়ম উঠে এ নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা ও মাসিন উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিবার অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে কাজের প্রাক্কলন ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দূর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনের।
প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ ব্যয় থেকে চার কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি বাড়িয়ে মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৭ টাকা। বারবার সময় এবং টাকার পরিমাণ বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যায়নি। তবে গণপূর্ত বিভাগ বলছে চলতি বছরের জুনের মধ্যে যে কোনোভাবে কাজটি তারা বুঝে নিতে পারবেন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর লিটন বলেন, শয্যা সংকটে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মানসম্মত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছেনা। নতুন ভবন চালু হলে ২৫০ শয্যার সুবিধাভোগ সম্ভব হবে রোগীদের। রোগীদের কল্যাণে যে কোনো বরাদ্দও বৃদ্ধি পাবে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। নতুন একটি ভবন হচ্ছে। ভবনটি বুঝে পেলেই ২৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তি কমবে। তবে ২৫০ শয্যার জনবলও নিয়োগ দিতে হবে। কারণ শয্যা সংকটের চেয়েও জনবল সংকট মারাত্মকভাবে আমাদের ভোগাচ্ছে। এখন ১৪৮ জনের মধ্যে আমাদের জনবল রয়েছে ১০৫ জন। তবুও চিকিৎসক-নার্সসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, নতুন ভবনটি ২০২৩ সালের জুনে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। পরে সংশ্লিষ্টরা মেয়াদ বাড়িয়েছেন। আগামী জুনের মধ্যে ভবনটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইস্কান্দার মির্জা শামীমের ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন জানান, এ প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়ে যাবে। ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে কার্যাদেশের নির্ধারিত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই আবেদনে প্রাক্কলন ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে জুন মাসের ভেতরেই কাজ বুঝে নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :