নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুর (সদর) পৌরসভার ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে হাট-বাজার (ইজারা) হিসাবে সর্বোচ্চ ইজারাদার মনোনীত হয়েও সাড়ে ৩ মাসে খাজনা আদায় করতে পারছেন না ইজারাদার মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী।
এতে করে মোটা অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইজারদার মনিরুজ্জামান।
পৌরসভার সচিব আলাউদ্দিনের কারসাজির কারণে ইজারাদার সঠিক সময়ে বাজার বুঝে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করছেন সুধীজন।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ১৪৩০ সনের ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল ২০২৩) থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছরের জন্য হাটবাজার ইজারা দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে অংশগ্রহণ করে তরকারি বাজার, ট্রাক ও মালবাহী গাড়ি, মোরগ বাজার, দুধ বাজার ও সুপারি বাজার সর্ব্বোচ্চ ইজারাদার নির্বাচিত হয় মনিরুজ্জামান। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ইজারা মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট, আয়কর ও জামানত বাবত লক্ষ্মীপুর এনআরবিসি ব্যাংক পে-অর্ডার মাধ্যমে ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা মেয়র বরাবর পরিশোধ করে ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল পৌরসভার সঙ্গে ইজারা চুক্তি হয়।
চুক্তিনামার পর দখলনামার সঙ্গে টোল আদায়ের হারে তালিকা সরবরাহ করার কথা। ইজারা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনার জন্য হাটবাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর পৌরসভা একটি হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। কমিটির সভাপতি মেয়র, জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, সকল নির্বাচিত কাউন্সিলর সদস্য সহ মোট ২৭ জন থাকবেন কমিটির সদস্য। এই কমিটি হাটবাজার তদারকি ও টোল আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ তদারকি করবে। কিন্তু সাড়ে তিন মাস পার হয়ে গেলও ইজারাদারকে হাটবাজারের দখল বুঝিয়ে না দেওয়ায় টোল আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন যে, দখলনামা বুঝে পেতে পৌরসভা কার্যালয়ে যোগাযোগ করায় মেয়র পৌরসভার সচিব আলাউদ্দিনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। পরবর্তীতে সচিব দখল বুঝিয়ে দিবেন মর্মে একাধিকবার তারিখ দিয়ে নানা রকম তাল-বাহানা করায় বিগত ২০২৩ সালের ২৬ জুন হাটবাজারের দখল বুঝে পেতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী হাটবাজারের দখল বুঝিয়ে দিয়ে টোল আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মেয়র, লক্ষ্মীপুর পৌরসভাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ইজারা গ্রহীতা মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী জানান, ইজারাদার মনোনীত হওয়ায় পর ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল পৌর মেয়রের সঙ্গে ৫টি বাজারের আলাদা আলাদা কিছু শর্তসাপেক্ষে ইজারা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পৌরসভা আমাকে বাজার বুঝিয়ে দিবে এবং আমি ১৪ এপ্রিল থেকে খাজনা নেওয়া কথা। কিন্তু অদ্যবধি বাজার দখল বুঝিয়ে না দেওয়ায় পাশাপাশি চুক্তি পত্রে বাজারের নাম স্থান, জমির পরিমাণ ও দাগ নম্বর উল্লেখ না থাকায় খাজনা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি।
সরজমিনে দেখা যায়, পৌর কিচেন মার্কেটের মোরগ ব্যবসায়ীরা এবছর এখন পর্যন্ত কোনো টোল প্রদান করেননি।
সুপারি ব্যবসায়ী জানান, নিদির্ষ্ট কোনো বাজার নেই। শুধু মাত্র মৌসুমের সময় উত্তর তেমুহনী কাঁচা সুপারি বিক্রি হয়। পৌর বাজারে শুকনা সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানে বসে কেনাবেচার খাজনা কিসের।
তরকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি জানান, বিগত কয়েক বছর মেয়রের মাধ্যমে ইজারাদারকে এককালীন টোল দিতাম। সে মোতাবেক মনির পাটোয়ারী এক সপ্তাহের মধ্যে টোল দিতে বলেন। কিন্তু সবাই টোল না দেওয়ায় মনির টোল তোলা বন্ধ রাখতে বলেন।
এ বিষয় জানতে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহানকে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর (সদর) পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া জানান, ইজারাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর ইজারার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোনো চিঠি তিনি পাননি।
আপনার মতামত লিখুন :