• ঢাকা
  • সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১ জুলাই, ২০২৩
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২৩



ডেঙ্গু বৃদ্ধির সঙ্গে ঝুঁকিতে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা

গ্রামীণ কণ্ঠ

দিন যত যাচ্ছে ততই ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু ও নতুন রোগীর সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকাদের নিয়ে ভাবতে হবে পরিবারকে। ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। এই বয়সী রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। তাই এসব রোগীদের নিয়ে চিন্তার ভাজ চিকিৎসকদের কপালে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যে চিকিৎসকদের মধ্যে ভয় শুরু হয়েছে। দুই তিন দিনের মধ্যেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি মৃত্যুও হয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুত প্লাটিলেট কমে আসার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলেও এবার সেটা কার্যকর হচ্ছে না। আর বয়স্কোদের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই কাজে আসছে না। যেহেতু তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

লালবাগের বাসিন্দা মিল্টন বলেন, আমার বাসায় মশার যন্ত্রণায় বসা বেশ কষ্টসাধ্য। দুপুরের পরই বাসার সব জানালা ও দরজা আটকে দেই। ঠিক বিকেলে বাসার প্রতিটি রুমে স্প্রে করি। গ্লুব ধরিয়ে দেয়া হয়। যাতে মশা বিকেলে ও সন্ধ্যায় ফ্ল্যাটের মধ্যে থাকতে না পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাতেও তো মশা থাকে। সেগুলোকে আটকাবো কি করে। সারাদিন তো ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা সম্ভভ না।

মশার ওষুধ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাসায় এখনো ফগিং করতে দেখিনি। তাই আমি সঠিক বলতে পারছি না। হয়তো অন্যান্য বাসায় আসে। আমি হয়তো দেখিনি। নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেই করছি। কারো জন্য অপেক্ষা করা যাবে না।

তিনি বলেন, আমার বাবা খুব অসুস্থ্য। তার ডায়বেটিস ও হার্টের সমস্যা আছে। কিডনিরও সমস্যা আছে। এই অসুস্থ্য মানুষটিকে নিয়ে চিন্তা সবচেয়ে বেশি।

মোহম্মদপুরের বাসিন্দা তৌসিফ আহসান (৩৮) বলেন, আমার বাসায় বাচ্চা দুজন। একজন ৮ আরেকজন ৩ বছর বয়স। এই অবস্থায় আমি বেশ চিন্তায় আছি। বাচ্চাদের নাকি সমস্যা বেশি হচ্ছে। টিভিতে দেখি মশা মারার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সেটা কোথায়। আমাদের চোখে সেটা পরে না।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক রিজওয়ান আহসান বিপুল বলেন, প্রতিদিন শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাচ্চাদের শরীর খুব দ্রুত অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি আমাদেরকে চিন্তিত করে তুলছে। চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন এখন পর্যন্ত আসেনি। তাই আমরা প্রচলিত চিকিৎসাই দিয়ে যাচ্ছি।

মুগদা মেডিকেলের চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের নিয়ে চিন্তা বেশি। তাদের চিকিৎসাও দিতে হয় দ্রুত। এর সঙ্গে যাদের ডায়বেটিস, কিডনি, হার্ট ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ আছে তাদের চিকিৎসা করা কঠিন। কারণ তাদের সব ধরনের ওষুধ দেয়া যায়না। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক কম। এই সব মিলিয়ে পরিবারগুলোকে আরো সচেতন হতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রশিদ ই মাহবুব বলেন, আমরা এখন এসে সারাসি অভিযান পরিচালনা করছি। প্রতিদিন লার্ভিসাইট ছিটাচ্ছি। ফগিংয়ের ওপর জোর দিয়েছি। এগুলো আগে করলে এতটা সমস্যা হতো না। তাছাড়, রাজধানীর মানুষ আর কবে সচেতন হবে। সব কিছু তো সরকার করবে না। বর্ষার সময় পানি বাসার গলিতেও জমে থাকে। সেগুলো পরিস্কার করার দায়িত্ব নিজেদের। কিন্তু আমরা সেটা করি না। এগুলো নিজেদের করতে হবে।

তিনি বলেন, এখন যা হয়ে গেছে তা নিয়ে ভেবে বা দোষারপ করে আর কোনো লাভ হবে না। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। পানি যাতে জমে না থাকে সেদিকে সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। আর পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। অবহেলার কারনেই এই দুই বয়সের মানুষ বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। তাই এদের নিরাপত্তায় অবহেলা করা যাবে না।

আরও পড়ুন