করোনাভাইরাস মহামারির সময় মুখে মাস্ক পরতে পরতে জাপানের মানুষজন এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, তারা কার্যত হাসতেই ভুলে গেছে। এর ফলে হাসি শিখতে এখন প্রশিক্ষকের শরণাপন্ন হচ্ছেন অনেকে।
যদিও পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে করোনা মহামারির আগে থেকেই মাস্ক পরার প্রচলন ছিল। মৌসুমী অসুখ-বিসুখ ও হে ফিভার (অ্যালার্জিজনিত সমস্যা) মোকাবিলায় অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করতেন। তবে করোনার সময় এর ব্যবহার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সরকারিভাবেই ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয় সেখানে।
তবে মহামারির ভয়ংকর সময় পেরিয়ে গেলেও জাপানে আজও জনসমক্ষে মাস্কছাড়া খুব বেশি মানুষ দেখা যায় না। তিন বছরেরও বেশি সময় পরে গত মার্চ মাসে দেশটির সরকার মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করে। কিন্তু এরপরেই অনেকে বুঝতে পারেন, মাস্ক ছাড়া কীভাবে জীবনযাপন করতে হয় তা ভুলে গেছেন তারা। তাদেরই একজন হিমাওয়ারী ইয়োশিদা।
২০ বছর বয়সী এ তরুণী বলেন, কোভিডের সময় আমি আমার মুখের পেশী খুব বেশি ব্যবহার করিনি। এখন ‘হাসির প্রশিক্ষক’ ভাড়া করতে হয়েছে তাকে। হিমাওয়ারীর মতে, এটি তাকে জাপানের চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।
হিমাওয়ারী ইয়োশিদা এবং তার সহপাঠীদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। তাদের ফের হাসতে শেখাচ্ছেন কেইকো কাওয়ানো। সামনে একটি আয়না ধরে এবং আঙুল দিয়ে মুখ টেনে প্রসারিত করে হাসি শেখানো হচ্ছে এই ছেলেমেয়েদের।
কেইকো কাওয়ানোর সংস্থার নাম এগাওইকু। সাধারণভাবে এটি একটি ‘হাসি শিক্ষাকেন্দ্র’। সাম্প্রতিক সময়ে এর চাহিদা প্রায় চারগুণ বেড়েছে।
এগাওইকুর একেকটি সেশনের জন্য আগ্রহীদের খরচ করতে হচ্ছে ৭ হাজার ৭০০ ইয়েন, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ছয় হাজার টাকা।
কেইকো বলেন, আমি মনে করি, মানুষের হাসির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তিনি বিশ্বাস করেন, জাপানি নাগরিকরা পশ্চিমাদের তুলনায় কম হাসে। কারণ একটি দ্বীপরাষ্ট্রের বাসিন্দা হিসেবে তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধের অভাব রয়েছে। আর এই প্রবণতা মাস্ক পরার কারণে আরও বেড়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে কেইকো বলেন, সাধারণত একটি হাসি মানে আমি বন্দুক ধরে নেই এবং আমি আপনার জন্য হুমকি নই।
গত মে মাসে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে’র এক জরিপে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা উঠে যাওয়ার পরেও জাপানের ৫৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। মাস্কের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন মাত্র আট শতাংশ জাপানি।
সূত্র: স্কাই নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :