নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামে কৃষক মোহর আলী মাঝির পরিবারের ১৫৬ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনের যোগসাজসে মো. শাহজালাল নামে জনৈক ব্যক্তি জমিগুলো দখলে নেয়। সম্প্রতি মোহর আলীর বাড়ির গাছপালাও কেটে নিয়েছে তারা।
এ ঘটনার ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চর আলী হাসান গ্রামের মনপুরা ব্রিজ এলাকায়। চাষাবাদের জমি হারিয়েছে এখন মোহর আলী ও তার ভাই হযরত আলী মাঝি পরিবার নিয়ে দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তারা একই গ্রামের মৃত মুনছুর আহম্মদের ছেলে।
মোহর আলী মাঝি ও তার ভাই হযরত আলী মাঝি সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুনছুর আহম্মদ তাদের নামে ১ একর ৭০ শতাংশ জমি কবলা দলিল মূলে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। ওই জামি তাদের দখলেই ছিল। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল এ জমি বন্ধক রেখে মোহর আলী লক্ষ্মীপুর কৃষি ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। এতে ব্যাংকে জমির দলিল, জমা খারিজ খতিয়ান, দিয়ারা খতিয়ান ও খাজনা দাখিলা জমা নেয়। কিন্তু বিগত আর এস খতিয়ানের সময় বেআইনিভাবে শাহজালালরা ১৫৬ শতাংশ জমি রেকর্ড করে নেয়। এরপর থেকেই তারা জোরপূর্বক মোহর ও হযরতদের জমি দখলে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সাবেক ইউপ সদস্য জসিমের কাছে ওই জমি বর্গা দেয়। এমনকি মোহর ও হযরতদের বাড়ির গাছপালাসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদিও জোরপূর্বক নিয়ে যায় তারা। এতে জমি ফিরে পেতে ২০২১ সালের ১১ আগস্ট মোহর আলী বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতে শাহজালালদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা এখনো চলমান রয়েছে।
এদিকে মোহর আলী ও হযরত আলীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে শাহজালাল লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ২৯ মে উভয়পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ডেকেছেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আব্দুস সালাম মিয়া।
মোহর আলী মাঝি বলেন, জসিমের প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৮ বছর আগে শাহজালাল আমাদের ফসলি জমি দখলে নিয়ে গেছে। এনিয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যে তারা আমাদের বাড়ির গাছপালা কেটে নিয়ে গেছে। গাছের ডাবগুলোও তার জোরপূর্বক নিয়ে যায়। আমাদের পূর্ব পুরুষের কবরস্থানও তারা ভেঙে দিয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, মোহর ও হযরতকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কিছুদিন পরই তাদের বাবা মুনছুর আহম্মদ একই জমি শাহজালালদের কাছে বিক্রি করে দেন। শাহজালালদের কাছে জমির সকল দলিল রয়েছে। আমি বর্গা নিয়ে ওই জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মো. শাহজালাল জানান, আমি সৌদি প্রবাসী ছিলেন। আমার বাবা ১৯৮৬-৮৯ সালে কয়েকটি দলিলে ১৫৬ শতক জমি কেনেন। এরপর থেকেই আমাদের দখলে রয়েছে ওই জমি। কিন্তু মোহর আলী হঠাৎ করে ২০০১ সাল থেকে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে। এতে তাদের হয়রানি বন্ধে আমরা আদালতে মামলা করি। সম্প্রতি ওই জমিতে উৎপাদিত ধান সংগ্রহ করতে গেলে মোহর আলী ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশ আনে। পরে পুলিশ ধানগুলো স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহমানের জিম্মায় রাখে। মোহরদের বাড়িতে আমাদের জমি রয়েছে। আমরা সেই অংশের গাছপালা কেটেছি। আমাদের অংশ থেকেই ডাব নিয়েছি। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আবদুর রহমান স্বপন বলেন, মোহর ও হযরতকে তাদের বাবা ১৭০ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে। কিছুদিন পরই মুনছুর একই জমি থেকে ১৫৬ শতাংশ শাহজালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এখন এটি আদালত ছাড়া মীমাংসা করার সুযোগ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :