নোয়াখালীর হাতিয়ায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনকে অবরুদ্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। অবরুদ্ধের চার ঘণ্টা পর নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বিজয়া সেন তাদের উদ্ধার করেন।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার হরণি ইউনিয়নের টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পের গোল ঘরে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অবরুদ্ধ করার বিষয়টি জানার পর আমরা টাংকিরবাজার পুলিশ ক্যাম্পে যাই। স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সাইফুল আলম চৌধুরী বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলি। তাদের দাবি ছিল রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পাশাপাশি নোয়াখালীর পুলিশ ওই ক্যাম্পে থাকতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে আমি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে নোয়াখালীর দশজন পুলিশ সদস্যকে ওই ক্যাম্পে সংযুক্ত করেছি। যার মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), একজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও সাতজন কনস্টেবল থাকবেন।’
এদিকে ঘটনার বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. বাবুল হোসেন সুজন অভিযোগ করেন, ‘বিকালে রামগতি সার্কেলের এএসপি ও রামগতি থানার ওসি টাংকিরঘাট বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন। তাদের দেখে আমি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সালাউদ্দিন মেম্বার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিন মেম্বার ও সাখাওয়াত মাস্টার ক্যাম্পের গোল ঘরে যাই। এ সময় আমাদের দেখে এএসপি সাইফুল আলম চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে রামগতি থেকে হাতিয়ায় এসেছেন। এর আগেও একাধিকবার রামগতির পুলিশ ও লোকজন বিভিন্ন সময় আমাদের সীমানায় এসে আমাদের লোকজনকে মারধর করেছেন। আমাদের লাঞ্ছিত করা ও তাদের হয়রানি থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী টাংকিরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন বলেন, ‘মেম্বররাসহ আমি ক্যাম্পের গোল ঘরে গেলে সহকারী পুলিশ সুপার মেম্বারদের ওপর উত্তেজিত হয়ে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে আমরা দ্রুত ওইস্থান থেকে বের হয়ে চলে আসি।’
এদিকে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন দাবি করেন, ‘সন্ধ্যায় আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে টাংকিরঘাট ক্যাম্পে আসি। ক্যাম্পে আমাদের মিটিং (সভা) চলাকালে স্থানীয় মেম্বাররা আসলে আমরা ওনাদের পরে আসতে বলি। কিন্তু ওনারা বাইরে গিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে উত্তেজিত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন।’
তবে ইউপি সদস্য বাবুল হোসেনের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘টাংকির বাজার ক্যাম্পের পাশে নোয়াখালী অঞ্চলে আরও একটি আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স) ক্যাম্প রয়েছে। আমরা ক্যাম্পের গোল ঘরে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সদের নিয়ে মিটিংয়ে বসার কিছুক্ষণ পর কোনো কিছু না বলে একজন লোক বসে পড়েন। আমি ওনার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মাইন উদ্দিন মেম্বার বলে পরিচয় দেন।’
তিনি দাবি করেন, ‘মেম্বার ও তার সঙ্গে থাকা লোকদের পরে আসার জন্য বললে তারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজনকে উত্তেজিত করে তুলে সহস্রাধিক লোক জড়ো করে ফেলেন। এ ঘটনায় রামগতি ও হাতিয়ার সীমানা বিরোধের যোগসূত্র থাকতে পারে। পরে নোয়াখালী থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন। ওনারা আসার পর বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।’
নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জায়গা আমাদের, মানুষ আমাদের। চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে সব কিছু আমাদের। তারপরও হয়রানির শেষ নাই। এর আগেও রামগতির পুলিশ এসে আমাদের লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। আজও তারা আগের কায়দায় লোকজনকে হেনস্তা করায় স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।’
আপনার মতামত লিখুন :