দেশে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এই মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাজারে সিন্ডিকেশন রয়েছে কি না, অদৃশ্য হাতের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অধিদপ্তরের কার্যালয়ে পাইকারি ও খুচরা পোলট্রি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে এই মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, খুচরা ও পাইকারি বাজারে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য না টাঙালে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই এলাকার ব্যবসায়ী সমিতি বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে কাজ করবে।
গতকালের সভায় প্রতিটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে সভা পরিচালনা করেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ব্যবসায়ীরা যেসব তথ্য উপস্থাপন করেন, বেশির ভাগই ছিল অসংগতিপূর্ণ।
গতকালের সভায় বসে বিভিন্ন প্রান্তের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাত্ক্ষণিকভাবে তথ্য যাচাই করেন মহাপরিচালক। তিনি বলেন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মূল্যতালিকা টাঙাতে চান না। তাঁরা দম্ভ করে বলছেন, কোনোভাবেই সেটি করবেন না। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে মূল্যতালিকা টাঙাতে হবে। বলা হয় ব্যবসায়ীরা খারাপ আছেন, কিন্তু তাঁরা বাড়ি-গাড়িও করছেন।
দদএ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ১৪০ টাকার মুরগি কেন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে কেউ জড়িত থাকলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে দোকানে ব্রয়লার মুরগি কত করে কেনা হয়েছে এবং কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
গতকালের সভায় ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘খামারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে আমরা যারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুরগির উৎপাদন করি, তাদের দক্ষতার কারণে খরচ ২০ টাকা কম হয়ে থাকে। ফলে আমাদের খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।’
ব্যবসায়ীদের কাছে কত টাকায় এসব মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী জাহিন হাসান বলেন, জেলা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘এখন ব্রয়লারের বাচ্চার চাহিদা বেড়েছে। বাচ্চা উৎপাদনে খরচ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়। আবার বাচ্চার উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে। তখন মুরগির দামও কমে আসবে। এটা এক দিনে হবে না।’
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। রাতের বাজারগুলোতে করপোরেট কম্পানির লোক থাকেন। তাঁরা করপোরেট কম্পানিকে রাতেই দাম জানিয়ে একটি এসএমএস করেন। পরে সকালে করপোরেট কম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। তা ছাড়া কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ আছে। সেখান থেকেও এসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই এসএমএসের মাধ্যমে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সে দামটিই বাজারে বাস্তবায়ন হয়। যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেয়। আর যখন আমাদের হাতে পণ্য থাকে না, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমাদের হাতে পণ্য নেই, এখন মুরগির কেজিপ্রতি দাম ২৫০ টাকা।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজার অদৃশ্য মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। ১৪০ টাকার মুরগি ভোক্তারা কেন ২৫০ টাকায় কিনবে, এর দ্রুত সমাধান চাওয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :