নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশ্রয়ণ কেন্দ্র মুজিব কিল্লার সরকারি পুকুরে ৪টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবু ছিদ্দিক অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন করছেন। উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির টিম লিডার শামছুদ্দোহা খোকন বালু উত্তোলনে নিষেধ করলেও মেম্বার তা কর্ণপাত করছেন না।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে দেশের প্রথম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি কমলনগরের চরমার্টিন ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মার্টিন গ্রামে অবস্থিত। এখানে একটি বড় পুকুর রয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কিন্তু ইউপি সদস্য আবু ছিদ্দিক ও স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল করিমের নেতৃত্বে ৪টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
রোববার (৫ মার্চ) সকালে ঘটনাস্থল গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় পুকুরপাড়ে ৪টি পাম্প মেশিনও দেখা যায়। পাইপের মাধ্যমে উত্তোলন করা বালু ২০০ মিটার দূরে স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে স্তূপ করা হয়েছে। মুজিব কিল্লার ওই পুকুরটির উত্তরপাড়ে কৃত্রিম পর্বত (মাটির স্তূপ) ও অপর তিনপাশে ৪০-৫০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর রয়েছে। বালু উত্তোলনে ঘরগুলো ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় ঘরগুলোর বাসিন্দারা মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। ঘর নিয়েও তারা আতঙ্কে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর মার্টিন মৌজার দেড় একর আয়তনের পুকুরটি সিপিপি থেকে ইজারা নিয়ে ইউনুস মিয়া নামে এক ব্যক্তি মাছচাষ করছেন। তিনি নিজেও সিপিপির একজন সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুকুরটি তিনি ইজারা নিয়েছেন।
ইজারাদার ইউনুস মিয়া বলেন, আমি অসুস্থ, বালু উত্তোলনের জন্য ছিদ্দিক মেম্বার আমাকে পুকুর থেকে মাছ ধরতে বলেছেন। মাছ ছোট হওয়ায় ধরতে পারিনি। মেম্বার কিসের ক্ষমতাবলে বালু তুলছেন তা আমি বলতে পারবো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ৩ জন জানান, ছিদ্দিক মেম্বার স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তার লোকজন রয়েছে। কিছু হলে তারা তেড়ে আসে মানুষজনকে মারধর করতে। এখন জোরপূর্বক তিনি পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এতে আশপাশের ঘরগুলো যেকোনো সময় ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মেম্বারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে না।
উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির টিম লিডার শামছুদ্দোহা খোকন বলেন, ইউনুস মিয়া নামে একজনের কাছে পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। মেম্বার ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগটি দিলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া মেম্বারকে বালু উত্তোলনে নিষেধ করলেও মেম্বার কর্ণপাত করছেন না।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আবু ছিদ্দিক বলেন, এখন বালু তুলে রাখছি। ভবিষ্যতে বালুগুলো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হবে।
তবে সরকারি পুকুর থেকে বালু উত্তোলনে অনুমতি নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর বৃহত্তর নোয়াখালীর উপকূলে ৩৩টি কেল্লা নির্মাণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব পরিদর্শন করেন। তখন তিনি এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে দায়িত্ব দেন। পরে এ অঞ্চলের মানুষ কেল্লাগুলোর নাম দেন ‘মুজিব কিল্লা’। এসব কেল্লার কারণে ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালের ভয়াবহ বন্যায় রক্ষা পেয়েছিল এ উপকূলের মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশু। কিন্তু বর্তমানে এগুলো পুরোটাই বেদখলে চলে গেছে। কমলনগর উপজেলায় বর্তমানে ৫টি ‘মুজিব কিল্লা’ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :