• ঢাকা
  • সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২ মার্চ, ২০২৩
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২৩



লক্ষ্মীপুরে ডিসির হুশিয়ারি : তবু কম চাল দিয়েও নিচ্ছে ‘খরচাপাতি’

গ্রামীণ কণ্ঠ

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বুধবার (১ মার্চ) থেকে আগামী দুই মাস লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসময় মাছ পরিবহন, মজুদও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা।

এদিকে, সরকারি সহায়তা হিসেবে জেলেদের জন্য ভিজিএফের চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু খাদ্য সহায়তা ও জেলেদের তালিকা প্রনয়ণ নিয়ে জেলেদের রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

বুধবার (১ মার্চ) লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার রামগতির আলেকজান্ডার থেকে মেঘনা নদী এলাকার চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারকে ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার জেলে এখন বেকার ও অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার নৌকা তৈরী ও জাল বুননে ব্যাস্ত সময় পার করছেন এখন।

মৎস্য বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার। মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় জেলেদের প্রতিজনের জন্য ১৬০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৮০ কেজি করে চাল পাবেন ২৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ফিরে বেশি বেশি ইলিশ পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেছেন অনেকেই। তবে অনকে জেলেরই রয়েছে নানা অভিযোগ।

রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের নূর মোহাম্মদ, সালাহ উদ্দিন মাঝি ও নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন জেলে অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত জেলে হয়েও কার্ডধারী হতে পারেননি তারা। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি তাদের। টাকা দিয়েও জেলে কার্ড ভাগ্যে জোটেনি বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

আবার অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ১৫০০-৩০০০ টাকা দিয়ে কার্ড করেছেন। এখন প্রথম ধাপের ৮০ কেজির বরাদ্দের চালের মধ্যে ৫০-৬০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। তাও এই চাল নিতে ২০০টাকা করে দিতে হচ্ছে।

জেলে জাহাঙ্গীর জানান, জেলে কার্ড করতে ২ হাজার টাকা নেন সংশ্লিষ্টরা। পরে অনেক ভোগান্তি শেষে ৩ বছর পর জেলে কার্ড পেয়েছি। এখন আবার চাল নিতে গেলে ২০০ টাকা দিতে হয়। সরকারিভাবে প্রথম ধাপে ৮০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৬০ কেজি। জেলেরা মৎস্য কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে।

আলেকজান্ডারের ইউপি গ্রাম পুলিশ কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নে চাল বরাদ্দ হয়েছে ৮০ ভাগ জেলের জন্য। কিন্তু আমরা প্রত্যেক জেলেদের চাল দিচ্ছি। তাই ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি দেওয়া হচ্ছে।

রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। চাল বিতরণে ট্যাগ অফিসার থাকার বিধি থাকলেও কারো দেখা মেলেনি সেখানে। বরং ইউনিয়ন পরিষদের এক ব্যক্তিকে চাল বিতরণের সময় জেলেদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করতে জানা যায়।

জানতে চাইলে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আব্বাছ সুমন বলেন, আমার ইউনিয়নে ৪ হাজার ২৭০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭০ জনের জন্য বরাদ্দ এসেছে। তাই সবাইকে সমন্বয় করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম আব্বাছ সুমন আরও বলেন, ইউপি ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো, আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪০ হাজার। সরকারিভাবে জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৩৪৪ জন জেলে পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ৪ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জেলে হালনাগাদ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মৎস্য অভিযান সফল হলে এ বছর ২৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হবে।’ চাল বিতরণে অনিয়ম বা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ইলিশের অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এসব অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই সময়ে তিনি প্রত্যেক ইউনিয়নে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে চাল বিতরণের জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

আরও পড়ুন