ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ ঘোঁচানোর মিশন এবার বাংলাদেশের। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে কোচিং অধ্যায়ের অভিষেক অ্যাসাইনমেন্টে কোচ হাতুরুসিংহে আক্রমনাত্মক ক্রিকেট মন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটারদের মাথায়।
তবে ব্যাটারদের আত্মাহুতিতে ইংল্যান্ডের কাছে ৩উইকেটে হার দিয়ে শুরু হয়েছে হাতুরুসিংহের দ্বিতীয় দফার কোচিং!
ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে ডেভিড মালান খেলছেন দীর্ঘদিন। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) প্রাইম দোলেশ্বরে পারফর্ম করে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে তার।বিপিএলের সর্বশেষ আসরেও খেলেছেন এই ইংলিশ টপ অর্ডার।
মিরপুরের উইকেটটা তার বড্ড চেনা-জানা।সাকিব,তাইজুল,মিরাজের স্পিন প্রতিরোধ এবং প্রতি আক্রমনের কৌশলটা তার জানা। সতর্ক ব্যাটিংয়ে বল ডট করতে করতে লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের উইকেটে, তা ভালই জানেন মালান।৭৮ টি বল ডট করেও তাই হিরো তিনি।
সংক্ষিপ্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগের ১৫টি ইনিংসের ৩টিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করার অতীত আছে মালানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম ওয়ানডে ইনিংসটা সেঞ্চুরি দিয়ে (১৪৫ বলে ৮ চার, ৪ ছক্কায় ১১৪*) করেছেন উদযাপন।
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে এই মালানের সেঞ্চুরিই গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। অবিচ্ছিন্ন ৮ম উইকেট জুটিতে আদিল রশিদকে নিয়ে ৫৯ বলে ৫১ রানে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ দলকে ডুবিয়েছেন হতাশায় এই ইংলিশ টপ অর্ডার।শান্তকে মিড অন দিয়ে মালানের বাউন্ডারিতে ৮ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে জিতে সিরিজ শুরু করেছে ইংল্যান্ড।
ব্যাটারদের আত্মাহুতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২১০ রানের চ্যালেঞ্জ দিয়ে শুরুতেই কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের দুই বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব-তাইজুল। ইনিংসের প্রথম ওভারে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটিকে করেছেন সাকিব বিচ্ছিন্ন।মিড অফে জেসন রয়-এর ক্যাচ তামিম নেয়ায় সাকিবের অভিনন্দনে অন্য এক দৃশ্যের অবতারনা হয়েছে। সাকিবের তিন ওভারের স্পেলের (৩-০-১১-১) পাশে তাইজুলের প্রথম স্পেলে (৫-০-৩০-২) স্কোরশিটে ৪৫ উঠতে হারিয়েছে ইংল্যান্ড ৩ উইকেট। ইনিংসের মাঝপথে তাসকিনের দ্বিতীয় স্পেল (২-০-২-১) এবং মিরাজের দ্বিতীয় (৩-১-৪-১) ও তৃতীয় স্পেলে (২-০-১৪-১) জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আবহ ছিল বাংলাদেশ দলের।
যেভাবে শুরুটা করেছিল বাংলাদেশ দল, তাতে উইকেটকে ব্যাটিং ফ্রেন্ডলিই মনে হয়েছে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ব্যাটিংটা (৫৪/২) মোটামুটি ঠিক ছিল। তবে শেষ পাওয়ার প্লে-তে হতাশ করেছে বাংলাদেশ দল। যোগ করতে পেরেছে এই পর্বে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান। ৫০ ওভার পার করতে পারেনি তামিমের দল। ১৬ বল হাতে থাকতে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস।ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশ দিতে পেরেছে ২১০ রানের চ্যালেঞ্জ।
মিরপুরে স্লো পিচে স্পিনাররা গর্জে উঠবে বলে ধারণা পোষণ করেছেন অনেকে। তবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের পেসারদের গতি বাংলাদেশ ব্যাটারদের ফেলে দিয়েছে চাপে।
আর্চার ঘন্টায় ১৫১ কিলোমিটার গতিতে দিয়েছেন একটি ডেলিভারি, ১৫০ কিলোমিটার গতিতেও করেছেন বল। মার্ক উডের পর পর তিনটি ডেলিভারি ছিল ১৪১.১৪৭,১৪৯ কিলোমিটার।
ওকসের ফুলটস ডেলিভারিতে লিটন বলের লাইনে যেয়ে ডিফেন্স করতে না পেরে লিটন এলবিডাব্লুউতে কাঁটা পড়েছেন (১৫ বলে ৭)।মার্ক উডের ঘন্টায় ১৪৯ কিলোমিটার গতির বলে ইনসাইড এজ হয়ে তামিমের প্লেড অন (৩২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৩)। এই দু’টি আউটের কথা বাদ দিলে সাকিব, মুশফিক,আফিফ, মিরাজ দিয়েছেন আত্মাহুতি।
তিন ব্যাটার আউট হয়েছেন সুইপ শট নিতে যেয়ে! লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে সুইপ করতে যেয়ে মুশফিক মিড উইকেটে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে এসেছেন (৩৪ বলে ১৭)। অফ স্পিনার মইন আলীকে ডাউন দ্য উইকেটে সুইপ করতে যেয়ে সাকিব বোল্ড হয়েছেন (১২ বলে ৮)। অফ স্পিনার উইল জ্যাকসকে সুইপ করতে চেয়ে মিড অনে দিয়েছেন আফিফ ক্যাচ (১২ বলে ৯)।মিরাজকেও পরিপক্ক মনে হয়নি এদিন। আর্চারের বলে দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ (১৯ বলে ৭)!
মাহমুদউল্লাহ এবং শান্ত’র ব্যাটিংটাই ছিল যা কিছু সান্ত্বনা। মার্ক উডের বলে মাহমুদউল্লাহ উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ। টিভি আম্পায়ার তা নিশ্চিত করেছেন (৪৮ বলে ৩১)। তার তিনটি বাউন্ডারির একটি ছিল মার্ক উডকে পাঞ্চ।
এদিন প্রতীক্ষিত হাফ সেঞ্চুরি করেছেন শান্ত।১৬তম ওডিআই ম্যাচে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আর্চারের ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলে লং লেগে সিঙ্গল নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন শান্ত ৬৭তম বলে। যে ইনিংসে ছিল ৫টি দর্শনীয় বাউন্ডারি।প্রথম স্কোরিং শটটি তার বাউন্ডারি দিয়ে। আর্চারকে লেট কাটে বাউন্ডারিতে ছন্দ পাওয়া শান্ত ওকসকে পর পর ২ বলে কাভার পয়েন্ট এবং বোলারর্স ব্যাক ড্রাইভে মেরেছেন বাউন্ডারি।
তামিমের ইনজুরিতে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে শান্ত’র ২০১৮ এশিয়া কাপে। ক্যারিয়ারের প্রথম ২৮ মাস ওয়ানডে দলে ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে হয়ে গেছেন নাজমুল হাসান শান্ত নিয়মিত। জিম্বাবুয়ে সফরে হারারেতে ৩৮ রানের ইনিংসটি ছিল তার ইতোপূর্বে একদিবসীয় ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।সেই ইনিংস টপকে শান্ত করেছেন ৫৮।
লেগ স্পিনার আদিল রশিদের গুগলিতে পুল করতে যেয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন শান্ত।৮২ বলের ইনিংসে ৬ বাউন্ডারিতে শোভিত ইনিংসে অবশ্য চল্লিশের ঘরে এসে সতর্ক ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইক রেট (৭০.৭৩) নিয়ে নিজেও হয়তবা তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন না শান্ত।
প্রথম স্পেলে মার খেয়ে (৪-০-২৩-০)ও ইংল্যান্ড পেসার আর্চার শেষটা করেছেন দারুণ (১০-০-৩৭-২)। ৬০ ডেলিভারির মধ্যে ৪৫টি দিয়েছেন ডট। শেষ স্পেলে (৩-০-৭-২)। আর এক পেসার মার্ক উড ও পেয়েছেন ২ উইকেট (৮-০-৩৪-২)। পেসার ওকসও ছিলেন মিতব্যয়ী (৮-০-২৮-১)।শেষ স্পেলে পর পর ২ বলে তাসকিনের হাতে ছক্কা, চার খেয়েও আদিল রশিদের লেগ স্পিন ভুগিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের (৯-০-৪৭-২)। ক’দিন আগে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অফ স্পিনার মইন আলীও যথারীতি দুর্বার (৭.২-০-৩৫-২)।
বাঁ হাতি স্পিনার নাসুমের পরিবর্তে তাইজুলকে স্কোয়াডে নেয়ার সিদ্ধান্তটা তামিমের। সেই সিদ্ধান্ত যে যথার্থ, অধিনায়ক তামিমের আস্থার প্রতিদান দিয়ে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ৩উইকেটে (১০-০-৫৪-৩) তা জানিয়ে দিয়েছেন এই বাঁ হাতি স্পিনার।আগামী দিনে বাংলাদেশের সেরা মিরাজও করেছেন দারুণ বোলিং (১০-২-৩৫-২)। তাসকিনও করেছেন দারুণ বোলিং (৯-১-২৬-১)। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লম্বা ফ্লাইটে ঢাকায় এসে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন শুটিং শেষে ম্যাচে নেমে সাকিব ভ্রমনক্লান্তিতে চেনাতে পারেননি নিজেকে (৮ রানও ১/৪৫)।উইকেটহীন মোস্তাফিজও নিজেকে সেভাবে চেনাতে পারেননি (৮-০-৪২-০)।
আপনার মতামত লিখুন :