বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যাটবট হলো চ্যাটজিপিটি। উন্মুক্ত করে দেয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি চ্যাটজিপিটি নামে একটি চ্যাটবট চালু করেছে ওপেনএআই। আপাতত পাবলিক টেস্টিংয়ের জন্য এটির ব্যবহার উন্মুক্ত করা হয়েছে। ওপেনআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেনএআই। ২০১৫ সালে গঠিত ওপেনএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলন মাস্ক, স্যাম অ্যাল্টম্যান ও আরো অনেকে, যাদের সম্মিলিত মূলধন ছিল এক বিলিয়ন ডলার (১০০ কোটি ডলার)। বর্তমানে এর সিইও হিসেবে কর্মরত স্যাম অ্যাল্টম্যান। এ নিয়ে লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার চ্যাটজিপিটি কী
চ্যাটবট হলো এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গঠন করা হয়। এটি একটি বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যাকে অসংখ্য ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। ফলে কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষের মতো করে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে; অর্থাৎ ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে পারে।
অন্যান্য চ্যাটবটের মতোই চ্যাটজিপিটিও দ্রুত সময়ে সাড়া দিতে সক্ষম। শুধু তা-ই নয়, আরো কিছু আকর্ষণীয় ফিচার রয়েছে এটির। রচনা লেখা থেকে শুরু করে গানের লিরিক্স লেখা, গল্প লেখা, এমনকি কবিতা লিখতেও নির্দেশ দেয়া যাবে এই চ্যাটবটকে। আর মার্কেটিং পিচ, স্ক্রিপ্ট, অভিযোগপত্র লেখা তো আছেই!
কিভাবে কাজ করে
পাবলিক টেস্টিংয়ের জন্য অ্যাপটির যে ভার্সন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এর উদ্দেশ্য হলো- ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বুঝতে পারা এবং সে সব প্রশ্নের যথাসম্ভব গভীরতর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা, ঠিক অনলাইন কথোপকথনে মানুষের লিখিত টেক্সটের মতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যাটজিপিটির মতো টুল বাস্তবিক প্রয়োগে ব্যবহার করা যাবে যেমন- ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি, কাস্টমার সার্ভিসের প্রশ্নের উত্তর দেয়া ইত্যাদি। মানুষের কথা বলার ধরন অনুসরণ করে এই চ্যাটবটটি অসংখ্য প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে সক্ষম।
এটি প্রাথমিকভাবে জনসাধারণের কাছে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। অল্পসময়ে চ্যাটজিপিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, ওপেনএআইয়ের ডেমো লিংকটি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রথম পাঁচ দিনের মাথায় এক মিলিয়নের বেশি মানুষ এতে সাইনআপ করে ফেলেন। যেখানে এমন ব্যবহারকারী পেতে ফেসবুক ও স্পটিফাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মাসের পর মাস লেগেছিল।
চ্যাটজিপিটি আমাদের বিভিন্ন ডিভাইস তথা মেশিনের সাথে কথোপকথনের ধরনে আমূল পরিবর্তন আনবে- এমনটিই দাবি করা হয়েছে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে। জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম সফটওয়্যারটি। ফলে অনেকের ধারণা, এটি গুগলের সার্চ ইঞ্জিন একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করবে।
তবে চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষক ও গবেষকরা এর বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তো শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নোটিশ জারি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
শিক্ষার্থীরা নিজেরা খেটেখুটে কিছু লেখার পরিবর্তে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেই সহজে কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করছে। উন্নত দেশগুলোর শিক্ষাবিদরা তাই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় অসদুপায় অবলম্বন করার প্রবণতাকে ধ্বংসাত্মকরূপে নিয়ে যেতে পারে চ্যাটজিপিটি।
আপনার মতামত লিখুন :