• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩



এক পরিবারের ৬৩ জন কোরআনের হাফেজ

গ্রামীণ কণ্ঠ

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান হাওলাদার। তার পরিবার এলাকায় হাফেজ পরিবার নামে পরিচিত। কারণ তার পরিবারে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, নাতজামাইসহ মোট ৬৩ জন কোরআনের হাফেজ রয়েছেন।

জানা গেছে, বিলবিলাস গ্রামের মৃত হাজি নূর মোহাম্মদ হাওলাদারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট শাহজাহান হাওলাদার। তিন বছর বয়সে মা ও সাত বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। বাউফল সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাস করেন। নিজের পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির তিন একর সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি নির্মাণ করেছেন ১২টি মাদরাসা ও তিনটি মসজিদ। তার ছয় ছেলে ও চার মেয়ে কোরআনের হাফেজ। তাদের বংশধররাও এখন হাফেজ হয়ে সংখ্যাটি বাড়িয়ে চলেছেন। দুই বছর আগে তাদের পরিবারে হাফেজ ছিলেন ৫৭ জন। আর এখন ৬৩ জন।

শাহজাহান হাওলাদারের বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা মজিবর রহমানের বিয়ে হয় হাফেজা মানসুরার সঙ্গে। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। তার তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে ছয় সন্তানই কোরআনের হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজ আটজন।

দ্বিতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা নূর হোসেন বিয়ে করেন হাফেজা শামসুন্নাহারকে। তিনি বাউফল বিলবিলাস দারুল কোরআন নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালক। তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে পাঁঁচ সন্তান কোরআনের হাফেজ। তার এক মেয়ের স্বামীও হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা আটজন।

তৃতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু বকর বিয়ে করেন হাফেজা নাছিমাকে। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে দারুল আকরাম নামে একটি মাদরাসা পরিচালনা করছেন তিনি। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তিনজন হাফেজ। আরও এক মেয়ের স্বামী হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ছয়জন।

চতুর্থ সন্তান হাফেজ ইব্রাহীম বিয়ে করেন হাফেজা মনিরাকে। হাফেজ ইব্রাহীম বরিশালের হাটখোলায় পাইকারি শস্যের দোকান পরিচালনা করেন। তাদের সংসারে এক মেয়ে ও চার ছেলের মধ্যে হাফেজ তিনজন। আরও এক মেয়ের স্বামী হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ছয়জন।

পরের সন্তান হাফেজ জোবায়ের বিয়ে করেন হাফেজা নাসরিনকে। তিনি বাউফলে ব্যবসার পাশাপাশি আছিয়া খাতুন মহিলা মাদরাসা পরিচালনা করেন। তাদের পরিবারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা সবাই হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ছয়জন।

ছোট ছেলে হাফেজ হুজাইফা বিয়ে করেছেন হাজেরাকে। তিনি ঢাকার বেগম বাজারে ব্যবসা করেন। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা দুইজন।

শাহজাহান হাওলাদার তার চার মেয়ের মধ্যে হাফেজা খাদিজাকে বিয়ে দেন হাফেজ মাওলানা ইমদাদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বাঁশবাড়িয়াতে একটি হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালনা করেন। তাদের দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে পাঁচজনই হাফেজ। আর ছেলের বউ ও মেয়ের স্বামী মিলে তিনজন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ১০ জন।
দ্বিতীয় মেয়ে হাফেজা আসমার বিয়ে হয় মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের সংসারে চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। তাদের ছয়জনই হাফেজ। আরও দুই মেয়ের স্বামী হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ১০ জন।

হাফেজ খানজার বিয়ে হয় হাফেজ মাওলানা সোলাইমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকার চিটাগাং রোডে অবস্থিত দারুল নাজাত হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালক। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে একজন হাফেজ। এক মেয়ের স্বামী হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা চারজন।

সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে হাফেজ আম্মারার স্বামী হাফেজ মাওলানা তালহা। তিনি লালবাগ মাদ‍রাসার শিক্ষক। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা তিনজন।

শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে হাফেজ জোবায়ের হাওলাদার বলেন, আমার বাবার পাঁচ নম্বর ছেলে আমি। আমাদের এই মাদরাসা আমেনা খাতুন মহিলা হেফজখানা আমরা ছয় ভাই ও চার বোনের। বড় ভাই সৌদি আরবে জেদ্দায় থাকেন। সেখানে মসজিদের ইমাম। তার ছয় সন্তান হাফেজ। আমাদের অন্যান্য ভাইয়েরা ও বোনেরা তাদের সন্তানদের হাফেজ বানিয়েছেন। তারা অনেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদরাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। আমি এই মাদরাসা পরিচালনা করছি। এখানকার প্রধান শিক্ষক আমার স্ত্রী। তার হাতে এখান থেকে শত শত মেয়েরা হাফেজ হয়ে এসব অঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন।
শাহজাহান হাওলাদার বলেন, আমার পরিবারে ১১ জন নাতজামাই, তারা সবাই হাফেজ। এছাড়া আমার পরিবারের ছেলে-মেয়ে, নাতবউসহ ৬৩ জন হাফেজ-হাফেজা রয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনই আন্তর্জাতিকমানের হাফেজ। আমি সাতটি কিতাব লিখেছি। সবার কাছে আমার অনুরোধ রইল আপনারা আপনাদের ছেলে-মেয়েদেরকে হাফেজ-হাফেজা বানাবেন। আমার ছেলে ও ছেলের বউয়েরা বিভিন্ন মাদরাসায় এখন হাফেজ বানানোর শিক্ষা দিচ্ছেন। মাদরাসার জন্য আমি কোনো দান বা সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি। আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির সম্পত্তি থেকে তিন একর জমি বিক্রি করে মাদরাসা ও মসজিদ করেছি।

আপনি তো হাফেজ না, তারপরও কেন এত হাফেজদের প্রতি আপনার ভালোবাসা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবা হাফেজদের খুব ভালোবাসতেন। ছোটবেলা থেকেই কেমন যেন হাফেজদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও সম্মান বেশি ছিল। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়ায় আমার পক্ষে হাফেজ হওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি চিন্তা করেছি আমার সন্তানদের সবাইকে হাফেজ বানাব। তারা ইসলাম প্রচার করবে।

১২নং বাউফল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, শাজাহান হাওলাদার একজন ভদ্র মানুষ ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার পরিবারের এই ৬৩ জন হাফেজ মানুষকে আল্লাহর পথে ধাবিত করতে পেরেছেন। এটা নিতান্ত গর্বের বিষয় আমাদের ইউনিয়নের জন্য। তারা হাফেজ হয়েও ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভালো টাকা উপার্জন করছেন, যা সারাদেশে উদাহরণ তৈরি করছে। তারা সবাই স্বাবলম্বী।

আরও পড়ুন