• ঢাকা
  • সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩



‘সংবাদপত্র জগতে আপসহীন সাংবাদিক পীর হাবিবের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়’

গ্রামীণ কণ্ঠ

পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সাংবাদিকতা জগতের আপসহীন কর্মী। তার চলে যাওয়ায় সংবাদপত্রে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

 

বাংলাদেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি)। ফুলেল শ্রদ্ধা ও স্মরণসভায় পীর হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। স্মরণসভায় বক্তারা পীর হাবিবুর রহ্মানের কর্মময়, সাহসী ও সাফল্যমণ্ডিত জীবন নিয়ে আলোচনা করেন।

 

অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, সিনিয়র সাংবাদিক, সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার পাশাপাশি পীর হাবিবের জন্মস্থান সুনামগঞ্জেও তাকে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে।

 

ঢাকায় স্মরণসভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন ‘ম্যাচিউরড’ সাংবাদিক। সত্য কথা বলতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন না। তার লেখায় ছিল বৈচিত্র্য। তার না থাকাটা বেদনাদায়ক।

 

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, পীর হাবিবুর রহমানকে সাংবাদিক, কলমযোদ্ধা, স্পষ্টভাষী কলামিস্ট হিসেবে পেয়েছি। তার বন্ধুত্ব যেমন অনেককে আকৃষ্ট করত তেমনি তার লেখনী অনেককে উদ্বুদ্ধ করত।

 

পীর হাবিবুর রহমান তার সময়ের সাংবাদিকদের মধ্যে অগ্রসর ছিলেন। তিনি নিজে যা বিশ্বাস করতেন সেটাই তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরতেন। তার লেখনী ছিল তথ্যনির্ভর। তার মতো স্পষ্ট কথা বলার সাংবাদিকের বর্তমান সময়ে যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

 

 

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, পীর হাবিবুর রহমানের ছিল অসাধারণ জীবনীশক্তি। রসিকতার মধ্য দিয়েও একটি লেখা কীভাবে তথ্যবহুল করে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে হয় তা এ প্রজন্মের সাংবাদিকদের পীর হাবিবুর রহমানের লেখনী থেকে শিখতে হবে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ এবং সাবেক মন্ত্রী জাফর ইমাম বীরবিক্রম তার বক্তৃতায় বলেন, দেশ, সাম্প্রদায়িকতা ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আমাদের আড্ডা হতো। বয়সে আমার ছোট হলেও চলার পথে পীর হাবিবুর রহমান আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন আড্ডাপ্রিয় মানুষ। তিনি যে কোনো বিষয়ে ক্লান্তিহীন লিখতে পারতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তার চলে যাওয়ায় সংবাদপত্রে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।

 

একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমি গাফ্ফার ভাই আর পীর হাবিবের মতো সাবলীল অনর্গল লেখক আর কাউকে দেখিনি।

 

 

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পীর হাবিবুর রহমান নিজে যা বিশ্বাস করতেন সেটাই তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরতেন। তিনি তরুণ সাংবাদিকদের কাছে হতে পারেন পথ নির্দেশক।

 

মাগুরা-১ আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর বলেন, তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছেন, আমরা তার ¯ন্ডেœহের ভাইরা তা পূরণ করার চেষ্টা করব। কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি সোহরাব জাহান বাদশাহ বলেন, পীর হাবিব সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতেন। পীর হাবিবুর রহমানের ভাই সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, হাবিব ভাই কলামিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিজেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাউকে পরোয়া করে চলেন নাই। গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের সমাজে তার মতো নিরপেক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে লিখতেন।

 

 

পীর হাবিবুর রহমানের সহধর্মিণী ডায়না নাজনিন তার বক্তব্যে বলেন, পীর হাবিব কাজকে ইবাদতের মতো দেখতেন। তার লেখনীর জন্য যেমন কটাক্ষের শিকার হয়েছেন, আবার ভালোবাসাও পেয়েছেন। স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের উপ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রতন, সাংবাদিক তানজির আহমেদ চৌধুরী সিদ্দীকি, পূর্বপশ্বিমনিউজ-এর সম্পাদক এবিএম জাকিরুল হক টিটন, পীর হাবিবের সন্তান ব্যারিস্টার আহনাফ ফাহমিন অন্তর ও রাইসা নাজ চন্দ্রস্মিতা প্রমুখ। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের।

 

 

সুনামগঞ্জে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ : সুনামগঞ্জে পীর হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল সুনামগঞ্জের মাইজবাড়ি গ্রামে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।  মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভার আয়োজন করে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি। বেলা ২টায় সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সাধারণ স¤পাদক রওনক আহমদ বখত, সহসভাপতি আল-হেলাল, সেলিম আহমদ তালুকদার, যুগ্ম স¤পাদক সিরাজুল ইসলাম শ্যামল, সদস্য ঝুনু চৌধুরী, মিজানুর রহমান, মাসুম হেলাল, আনোয়ারুল হক, আমিনুল হক, হোসেন মাহমুদ শাহীন, বাবুল মিয়া প্রমুখ। এর আগে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মী, পীর হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মনির উদ্দিনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বরকত, রসিদ আহমদ, মো. শওকত আলী, ফারুক আহমদ প্রমুখ। সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি লতিফুর রহমান রাজুর সভাপতিত্বে এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরা বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন