নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গত একমাসে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৫২ শিশু এবং ৬৬ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। বেশিরভাগ মৃত্যু ঠান্ডাজনিত রোগে হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। এখনো কয়েকশ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে।
জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৯২৭ এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৫০ রোগী ভর্তি হয়। এরমধ্যে ১৪৪ জন মারা গেছে। যার মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী ৫১ জন, পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী একজন, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী সাত জন, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯ জন ও ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ৬৬ রোগী মারা গেছেন।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, গত সাতদিনে শিশু ওয়ার্ডে ১২৯ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন রোগী মারা গেছেন। গত কয়েকদিন বেশিরভাগ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এদিকে, হাসপাতালটিতে জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার বাইরে থেকেও অনেক রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেড না পেয়ে রোগীরা ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়ে আবারও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়েও নানা অভিযোগ তুলেছেন।
শিশু ওয়ার্ডে ছয়দিন আগে ভর্তি হয়েছে নোয়াখালী সদর উপজেলার শরীফপুর গ্রামের আড়াই বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান। তার মা খালেদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, গত মাসে সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ১৬ দিন চিকিৎসা করিয়েছি। এরপর বাড়ি গিয়ে সাতদিনের মাথায় আবারও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মৌলভীবাজার এলাকার চারমাস বয়সী শিশু ফাহিমের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে ঠান্ডায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্থানীয় অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা দিই। তবে কোনো উন্নতি না হওয়ায় ছয়দিন আগে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।
এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে টাকা ছাড়া কোনো চিকিৎসা মেলে না। টাকা না পেলে সিট তো দূরে থাক একটা বেডশিটও দেয় না। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেট এত খারাপ, এতে ভালো মানুষও রোগী হয়ে যাবে।
তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা আক্তার বলেন, স্বল্প জনবল নিয়ে রোগীদের চাপ সামলাতে হচ্ছে। বার বার বলার পরও ডিউটি নার্সের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। রোগীরা একযোগে সেবা চাইলে একারপক্ষে একজন নার্স তা দিতে পারেন না। তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ৫৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪৩ জন। নার্সসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও চরম সংকট রয়েছে। ফলে রোগীদের অতিরিক্ত চাপে চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৮৬০ সালে এটি ১৫০ বেড়ের হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৯৮ সালে এটিকে ২৫০ বেড়ের জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও বিগত ২৫ বছরে এখানে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :