নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দেনায়েতপুর এলাকায় অবস্থিত মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ। ‘জিনের মসজিদ’ খ্যাত এ মসজিদটিতে একসঙ্গে এক হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৩৫ বছর আগে কোনো এক রাতে শত শত জিন মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি। শুধু ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণেই মসজিদটি জিনে নির্মাণ করেছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
রায়পুর প্রধান সড়কের ট্রাফিক মোড় থেকে পূর্বের সড়ক ধরে কিছুদূর সামনে এগোলেই চোখে পড়বে মসজিদটি। এর সামনে বিশাল দিঘি রয়েছে। মসজিদের সামনেই আজান দেওয়ার জন্য রয়েছে পুরোনো একটি মিনার। তবে এটি এখন পরিত্যক্ত। ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলোতে মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে এখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৮৮ সালে এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান প্রয়াত মাওলানা আবদুল্লাহ ভারতে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফেরেন। বাড়ি আসার থেকেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভারত থেকে কারিগর এনে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মসজিদ নির্মাণ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাওলানা আবদুল্লাহর বংশধররাই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের এ মসজিদের তিনটি গম্বুজ আর চারটি মিনার রয়েছে। মাটি থেকে ১৩টি সিঁড়ি পার হয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। হালকা কারুকাজ রয়েছে ভেতরে। ভেতরে ও বারান্দায় একসঙ্গে হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। একপাশের সিঁড়ি মসজিদের নিচে নেমে গেছে। সেখানে সবসময় পানি থাকে।
অনেকে এ পানিতে বিভিন্ন নিয়তে ওজু করেন। অনেকে বোতলে করে নিয়ে পান করেন। যদিও এখানে এখন সারাবছর পানি থাকে। তবে মসজিদের নিচের এ জায়গাটি প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল্লাহর ইবাদতখানা ছিল বলে জানা গেছে। মসজিদের পাশেই কওমি মাদরাসা ও মুসাফিরখানা এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
কথা হয় রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অবসর পেলেই আমরা এখানে ছুটে আসি। তবে বয়স্কদের কাছ থেকে মসজিদটির নির্মাণের বিষয়ে আমরা সঠিক কোনো তথ্য পাইনি। জিনের তৈরি করা মসজিদ—এ বিশ্বাস থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দেখতে আসে।’
মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও উপজেলা কাজি সমিতির সভাপতি মোতাচ্ছেম বিল্লাহ বলেন, ‘মসজিদের নকশায় ১৬টি গম্বুজ ও সামনে একটি বারান্দার আকৃতি রয়েছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় সেগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এখন বারান্দাটি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
মসজিদের বর্তমান ইমাম মাওলানা লুৎফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ও দাদা এ মসজিদের ইমামতি করেছেন। আমিও ১৪ বছর ধরে ইমামতি করছি। তবে এটি জিনের মসজিদ নয়, জিন কিছুই করতে পারে না। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা আবদুল্লাহর নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাওলানা আবদুল্লাহর কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন মসজিদটি জিনের টাকা কিংবা জিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কি না। তার উত্তর ছিল, মসজিদটি জনগণের টাকায় নির্মিত। ভারত থেকে কারিগর এনে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, ‘মসজিদটি আসলে কে নির্মাণ করেছেন, তা এখনো রহস্যঘেরা। তবে এটি জিনের মসজিদ, জিনরাই এক রাতে তৈরি করেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :