নিজস্ব সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক উম্মে জয়নাব পিয়ালকে তার স্বামী চিকিৎসক তামিম মুনতাসিরের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে ভূক্তভোগী পিয়াল সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
এরআগে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিয়াল তার স্বামীকে তালাক দেওয়ার লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুর আদালতে আবেদন করে। তালাকের আবেদন করায় তামিম ক্ষিপ্ত হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আদালতে একটি মিথ্যা বানোয়াট ঘটনায় মামলা দায়ের করে পিয়ালকে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
অভিযুক্ত তামিম মুনতাসির চরশাহী ইউনিয়নের রূপাচরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের কলাকোপা গ্রামের সাইফ উল্যার ছেলে। তবে তিনি বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখতে গিয়ে ঠিকমতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভূক্তভোগী পিয়াল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকার (সদর হাসপাতাল সংলগ্ন) ঠিকাদার আবুল কালাম মো. সালেহ’র মেয়ে।
পিয়াল ও তার বাবা আবুল কালাম মো. সালেহ’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তামিমের সঙ্গে পিয়ালের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একই বছর ডিসেম্বরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই তামিমের বদমেজাজী আচরণ পিয়ালের সামনে আসে। শুরু থেকেই তাদের পরিবারে কলহ সৃষ্টি হয়। তাদের সংসারে জাইন আমরিন নামে ২ বছর ৪ মাস বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানের কোন ভরণপোষণ দেননি বলেও তামিমের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী অভিযোগ করেছেন। সন্তান জন্মের ৮ মাস পর্যন্ত তিনি শিশুটিকে দেখতে আসেননি। পরে আসলেও স্ত্রী-সন্তানের প্রতি সদাচরণ ছিলনা তার। ২০২২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে তামিম-পিয়াল কুমিল্লায় পেশাগত প্রশিক্ষণে ছিলেন। স্ত্রীর কাছাকাছি থেকেও তিনি কখনো তার সঙ্গে ভালো আচরণ করেননি। উল্টো তাকে প্রায়ই মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে তামিম।
এদিকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পেশাগত উচ্চ শিক্ষা(এফসিপিএস)র জন্য পিয়াল জেলা সিভিল সার্জনের কাছে আবেদনের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে প্রশিক্ষণের অনুমতি নেয়। সেই সূত্রে তিনি হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট সাইফুল ইসলাম শরীফের কাছ থেকে সার্জারি বিষয়ে তার উচ্চ শিক্ষার ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তামিম নিজেই শরীফের সঙ্গে পিয়ালের পরিচয় করিয়ে দেন। দীর্ঘ এক বছর ধরে শরীফের কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন পিয়াল। এরমধ্যে তামিম ও পিয়ালের সংসারে বড়ধরণের কলহ সৃষ্টি হয়। ভরণপোষন না নেওয়া, স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ না রাখাসহ বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করে হয়রানি ও নির্যাতন করায় পিয়াল তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে তামিম নিজেই সিনিয়র চিকিৎসক শরীফের মুখাপেক্ষী হন। শরীফকে অনুরোধ করেন অভিভাবক হিসেবে তাদের মধ্যে চলা কলহ সমাধানের জন্য। কিন্তু দুইজনকে নিয়ে বসেও সমস্যা সমাধান করতে পারেননি তিনি ডা. সাইফুল।
অন্যদিকে তাদের কলহ আরও বাড়তে থাকে। এতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমে নোটারী পাবলিক করে তামিমকে তালাকের আবেদন করেন পিয়াল। এরপরই আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তামিম। পরে ১৯ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল রায়পুর আদালতে তামিম বাদী হয়ে পিয়াল ও চিকিৎসক শরীফের মধ্যে পরকিয়ার সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ৬ এপ্রিল অভিযুক্তদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারক।
চিকিৎসক উম্মে জয়নাব পিয়াল বলেন, চিকিৎসক শরীফ আমার প্রশিক্ষক। আমি তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের দিকে এগুচ্ছি। এ বিষয়টা তামিমের সহ্য হচ্ছিল না। আমি উচ্চ শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক হই তা তামিম প্রত্যাশা করছে না। তাই তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করায় তামিম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা উপস্থাপন করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করে। যাতে আমার শিক্ষক ডা. শরীফকে মিথ্যা অপবাদে জড়িয়ে মূলত তামিম চাচ্ছে আমাকে সামাজিক ও পেশাগতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে।
সদর হাসপাতালের সার্জারী কনসালটেন্ট সাইফুল ইসলাম শরীফ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমতি প্রেক্ষিতে ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদনের মাধ্যমে পিয়াল আমার কাছে প্রশিক্ষণার্থী (এফসিপিএস) ছিল। এতে তার পেশাগত দায়িত্ব এবং শিক্ষা প্রশিক্ষণের স্বার্থে সে আমার সঙ্গে থেকেই কাজ করতো। অপারেশন থিয়েটারেও আমার সঙ্গে থাকতো। কারণ আমার থেকে তাকে সবকিছু শিখতে হচ্ছে। তার কাজ, শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষেই এটা হয়ে আসছে। এটা এফসিপিএস শিক্ষার পার্ট-১ এর অংশ। তামিম-পিয়াল দম্পতির ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে এখন আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা ঘটনা রটানোর কোন কারণ আমি দেখছি না। এটা মানহানিকর এবং অবমাননাকর। আমি এ বিষয়ে আমার আইনজীবির মাধ্যমে জবাব দেবো। কিন্তু এ তামিমই তাদের পারিবারিক কলহ মীমাংসার করার জন্য আমার কাছে এসেছিল।
বক্তব্য জানতে চিকিৎসক তামিম মুনতাসিরকে মোবাইলফোনে কল দিলে প্রসঙ্গ বুঝতে পেরে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহাম্মদ কবীর বলেন, তামিমের অভিযোগ সত্য মনে হচ্ছে না। শরীফ প্রশিক্ষক হিসেবে পিয়ালকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া তামিম-পিয়ালের পারিবারিক দ্বন্ধ নিয়ে জানার পরে তাদেরকে সদর হাসপাতালের প্রশিক্ষণার্থী থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :